সময়ের গুরুত্ব

মানব জাতির জীবন পরিচালনার আদর্শ গাইডলাইন মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে সময় অপচয়,ও অনর্থক কাজে ব্যয় করার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। আমরা আল্লাহর তা’য়লার দেওয়া অসংখ্য নেয়ামত ভোগ করি,জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামত মধ্যে ডুবে থাকি।

হয়তো গাফলতির কারণে আমরা আল্লাহর নেয়ামতের কথা প্রায় সময় ভুলে যাই। পবিত্র কুরআনে নেয়ামত প্রসঙ্গে, মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, “যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামত গণনা করতে যাও, গণনা করে শেষ করতে পারবে না” (সূরা ইব্রাহীম৩৪)। অত্র আয়াত দ্বারা বুঝা যায় আল্লাহর দেওয়া নিয়ামতের সংখ্যা এত বেশি যা কখনোই গণনা করে শেষ করা যাবেনা।

অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ তা’য়ালার তার নেয়ামত, কুদরত, এবং মহত্ব সম্পর্কে বলেন,” সমস্ত দুনিয়ার সমস্ত গাছপালা বৃক্ষ-লতা যদি কলম হয়, আর সাত সাগরের পানি যদি কালি হয়, আর এইসব কলম, এবং কালি দিয়ে যদি আল্লাহ তায়ালার নেয়ামতের কথা লেখা শুরু করা হয়, এই কালি শেষ হয়ে যাবে তবুও আল্লাহ তাআলার নেয়ামতের কথা শেষ লেখা শেষ হবে না” (সূরা লোকমান 27) ।

সুবহানাল্লাহ,এত অগণিত অসংখ্য নিয়ামত আল্লাহ তার বান্দাদেরকে দিয়েছেন। এই অসংখ্য নেয়ামতের মধ্যে একটা বড় নেয়ামত হলো “সময়”।এটি আল্লাহ দয়া করে তার বান্দাদেরকে  দিয়েছেন, অতএব সময় আল্লাহর দেওয়া বড় একটা দামী নেয়ামত। মহান আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ ছাড়া পৃথিবীতে এক সেকেন্ড থাকার ক্ষমতা আমাদের নেই। অথচ আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতের মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান নেয়ামত সময়কে আমরা যথাযথ কাজে ব্যবহার করিনা, এবং সময়কে যথাযথ মূল্যায়ন করি না।

আল্লাহ পাক আমাদেরকে ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন আবার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছেন।যেমন, মানুষ ইচ্ছা করলে এই সময়কে কাজে লাগিয়ে জান্নাতে যেতে পারে,আবার সময়কে ঠিক কাজে ব্যবহার না করে, জাহান্নামে ও যেতে পারে। এই সময়কে মানুষ মূল্যায়ন করে ঈমানের কাজে লাগাতে পারে,আবার অপব্যবহার করে এটিকে কুফরের কাজেও লাগাতে পারে। সময়কে যেমন ভালো কাজে লাগাতে পারে, ঠিক মন্দ কাজেও লাগাতে পারে।

সময়কে কাজে লাগিয়ে মানুষ নেক আমল করতে পারে, বিপরীতে ব্যবহার করে গুনাহের কাজে লাগাতে পারে। কিন্তু আমরা ভুলে যাই, সময়কে যথাযথ কাজে ব্যবহার না করলে কেয়ামতের মাঠে মহান আল্লাহ তা’আলা জীবনের সময় সম্পর্কে আমাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে , মহান আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের মাঠে বান্দাদেরকে যেসব কথা দ্বারা ধমক দিবেন, এবং তিরস্কার করবেন তার মধ্যে একটা কথা এটাও থাকবে “আমি কি তোমাদেরকে এতটুকু বয়স এবং এতটুকু সময়ও দেয়নি, যে সময়কে তোমরা উপদেশর কাজে এবং নেক আমল কাজে লাগাতে পারতে? (সূরা ফাতিহা ৩৭)। এ আয়াত থেকে বোঝা যায় যে সময়কে সঠিক কাজে ব্যবহার না করলে, কেয়ামতের মাঠে আল্লাহর পক্ষ থেকে তিরস্কার আসবে। অন্য দিকে

সকল মানুষের মধ্য হতে রাসূল স. সবচেয়ে বেশি সময়কে গুরুত্ব দিতেন। তিনি তাঁর বেশির ভাগ সময় আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার কাজে ব্যয় করতেন। তিনি সময়ের প্রতিটি মূর্হূতেই যথাযথভাবে কাজে লাগাতেন। রাসূল সা. এর সময় ব্যয় করা প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত আছে, হুসাইন রা. বলেন: আমি আমার পিতাকে রাসূল স. এর বাড়িতে প্রবেশের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তখন তিনি বলেন: যখন তিনি বাড়িতে প্রবেশ করতেন, তখন প্রবেশ করাকে তিন ভাগে ভাগ করতেন্ এক ভাগ আল্লাহর জন্য, এক ভাগ পরিবারের জন্য আর এক ভাগ নিজের জন্য রাখতেন। অতঃপর তাঁর ভাগের কিছু অংশ নিজ ও মানুষের মাঝে প্রয়োজনে ব্যয় করার জন্য রেখে দিতেন।

তেমনিভাবে রাসূল স. জীবনে প্রায় বেশির ভাগ সময় আল্লাহর ইবাদত ও তাঁর আনুগত্যে ব্যয় করতেন, এবং হাদীস শরীফে    রাসূল সা. সময় অপচয় না করার জন্য তার উম্মতকে বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন,সময়কে যথাযথ মূল্যায়ন করে নেক আমলের কাজে ব্যয় করার জন্য রাসুল সা. তার উম্মতকে তাগিদ দিয়েছেন। সম্মানিত পাঠক আসুন আমরা জেনে নেই বুযুর্গানে দ্বীন এবং বিশিষ্ট মনীষীরা সময়ের গুরুত্ব সম্পর্কে কি বলেছেন। ইমাম হাসান বসরী রহ. বলেন: কোন কাজে গড়িমসি করা থেকে বিরত থাকো। আজকের কাজ আজকেই শেষ করো, আগামীকাল তুমি নাও থাকতে পারো। আর যদি আগামীকাল বেঁচে থাকো, তাহলে গতকালে মতো কাজ করো। আর যদি আগামীকাল মরে যাও তাতে তুমি  অনুতপ্ত হবে না।

সময় অপচয় হওয়ার অন্যতম আরেকটি কারণ হলো বিলম্বিত করা বা গড়িমসি করা। গড়িমসি করতে আমরা এক সময় বলে ফেলি যে, অচিরেই করব। এভাবেই এক সময় অচিরেই শব্দটা কোন কাজ সময়মতো করার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে যায়।
হযরত ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন, সময় একটি তরবারির মত যদি তুমি না কাটো তাহলে সে তোমাকে কেটে দিবে, সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না, এবং থেমে থাকে না। যদি সময়ের ভিতর কাজ করি তাহলে সময়ের ভিতরে লুকায়িত কল্যাণ হাসিল হবে,আর সময় অনুপাতে যদি কাজ না করি তাহলে সময় বেকার নষ্ট হবে।

ইবনে আতা সেকেন্দার রহ. বলেন, তোমার জীবন থেকে যে সময়টুকু চলে গেছে তার বিনিময় এবং বিকল্প, পৃথিবীতে আর নাই, এবং যে সময়টুকু তুমি অর্জন করতে পারলে তার মূল্য পৃথিবীতে নাই। বিশিষ্ট মনীষী ওমর ইবনে আবদুল আজিজ রহ. সময়ের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন, রাত্র দিন তোমার মাঝে কাজ করে যাচ্ছে সুতরাং তুমিও তাদের মাঝে কাজ করে যাও। বাংলাদেশের প্রখ্যাত বুজুর্গ হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. জীবনী থেকে পাওয়া যায়,

তিনি কোথাও সফরে জন্য রেল-স্টেশনে আসেন, ট্রেন আসতে দেরি হবে জেনে সময় নষ্ট না করে, সেখানে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ আদায় করেন। সুবহানাল্লাহ , বুযুর্গানে দ্বীন এভাবেই সময়কে মূল্যায়ন করতেন। আমাদের উচিত নবী রাসূলগণ এবং হক্কানী আলেম, বুযুর্গদের জীবনী বেশি বেশি করে পড়া এবং তাদের জীবনের মূল্যবান সময় কিভাবে অতিবাহিত করেছেন, তা থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া। প্রবাদ আছে, সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না” মুসলিমদের আজ অধঃপতনের মৌলিক একটা কারণ হল সময়কে গুরুত্ব না দেওয়া, এবং সময়কে যথাযথ মূল্যায়ন না করা। তাই বলা যায় সময় দিয়ে সম্পদ কেনা যায়, কিন্তু সম্পদ দিয়ে সময় কেনা যায় না।

আমাদের জেনে রাখা উচিত, প্রতিটি মানুষকে সময়ের হিসাব কিয়ামতের দিন দিতে হবে। তিনি আরো বলেন: কিয়ামতের দিন কোন বান্দা চারটি প্রশ্নের উত্তর না দেয়া পর্যন্ত সামনে যেতে পারবে না- সে তার জীবনকালে কোন কাজে ব্যয় করেছে, তার যৌবনকাল কোথায় ক্ষয় করেছে, তার সম্পদ কোথা থেকে আয় করে কোথায় ব্যয় করেছে এবং তার অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী সে আমল করেছে কি না। উল্লিখিত হাদীসের চার বিষয়ই সময়ের সাথে সম্পর্কিত।

রাসূল স. আরো বলেন; পাঁচটি বস্তু আসার পূর্বে পাঁচটি বস্তকে সুযোগ মনে করো। বার্ধক্যের পূর্বে যৌবনকে, অসুস্থ হওয়ার পূর্বে সুস্থতাকে, দারিদ্রতার পূর্বে সচ্ছলতাকে, ব্যস্ততার পূর্বে অবসরকে এবং মৃত্যুর পূর্বে জীবনকে। সময়কে নেক আমলের কাজে ব্যয় করে আমরা জেন জান্নাত অর্জন করতে পারি, আল্লাহ পাক আমাদেরকে সে তৌফিক দান করুক।আমিন
লেখক ,    হাঃ মোঃ আল-আমিন কাজী
শিক্ষার্থী : বি,এ অনার্স (ইসলামিক  স্টাডিজ বিভাগ) চাঁদপুর, সরকারি কলেজ।
ইমেইল: kazialamin274@gmail.com