মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্বের পবিত্র ঈদুল আযহা ১আগষ্ট

ইলিয়াছ পাটওয়ারী

আগামী ১ আগষ্ট শনিবার পবিত্র ঈদুল আযহা। মুসলিম উম্মাহর অন্যতম প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান। ‘ওরে হত্যা নয় আজ সত্যাগ্রহ শক্তির উদ্বোধন’। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই বিখ্যাত কাব্যপংক্তির মধ্যে চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে ঈদুল আযহার মর্মবাণী।

ত্যাগের মহিমা ও আনন্দের বার্তা নিয়ে মুসলিম বিশ্বের ঘরে ঘরে ঈদুল আযহা হাজির হয় ১০ জিলহজ্ব। যা মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্বের এক অনুপম দৃশ্য। ভোগে নয়, ত্যাগেই আনন্দ। ত্যাগের আনন্দ অনুভব ও ত্যাগের অনুশীলনের জন্য সমগ্র জাতির প্রস্তুতি এখন সম্পন্ন প্রায়। কুরবানীর ঈদে পশু কুরবানীর মাধ্যমে ত্যাগের শক্তিতে ও নববলে বলীয়ান হওয়ার এক মহাসুযোগ।

এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহর থেকে মানুষজন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদ উদ্যাপন করতে লঞ্চ, স্টিমার, বাস ও ট্রেনে করে বাড়িঘরে ফিরছে। তাই মানুষজন স্বস্তিতেই বাড়ি-ঘরে আসতে পারছে। গত এক সপ্তাহ আগ থেকে মানুষ যার যার কর্মস্থল থেকে বাড়ি-ঘরে আসা শুরু করেছে। উদ্দেশ্যে একটাইÑপরিবার-পরিজন ও প্রিয়জনদের সাথে ঈদ করা। তাই উৎসবপ্রিয় মানুষের পদচারণায় মুখরিত শহর গ্রামাঞ্চল সর্বত্র। গতকাল গভীর রাত পর্যন্ত লঞ্চ, স্টিমার, বাস ও ট্রেনে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। আজও থাকবে ভিড়।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঘোষণা করেছেন, কুরবানীর পশুর রক্ত কিংবা গোশত তার কাছে পৌঁছে না, পৌঁছে কুরবানীদাতার পরহেজগারী ও সদিচ্ছা- মহান রবের প্রতি বান্দাহর আনুগত্য। যে পবিত্র ঘটনাকে স্মরণ করে প্রতি বছর ঈদুল আযহা উদযাপিত হয়, এর সূত্রপাত আজ থেকে প্রায় ৩ হাজার ৮শ’ বছর আগে। ঘটনাটি হচ্ছে মুসলিম জাতির পিতা আল্লাহর নবী হযরত ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহ পাকের নির্দেশে স্বীয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ)কে কুরবানী করতে উদ্যত হয়েছিলেন। আল্লাহর ভালোবাসায় সর্বাপেক্ষা প্রিয় বস্তু উৎসর্গ করতে পারেন কি না তা পরীক্ষা করার জন্যই আল্লাহ তা’য়ালা ইবরাহীম (আঃ)কে এই নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। অবশ্য এখন আর সেই রূপ সর্বাপেক্ষা প্রিয় বস্তু কুরবানী করতে হয় না। বরং হালাল পশু জবাই দ্বারাই কুরবানী আদায় হয়ে যায়।
ঈদুল আযহায় কুরবানী করা সমস্ত নেক কাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম। কুরবানীর জন্তুর রক্ত মাটি স্পর্শ করার আগেই তা আল্লাহর নিকট কবুল হয়ে যায়। প্রত্যেক সামর্থ্যবান লোকের উপর কুরবানী ওয়াজিব। যাকাত পরিমান মাল থাকলে কুরবানী দিতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্বেও কুরবানী করে না, সে যেনো আমার মুসাল্লায় (ঈদের জামাতে) না আসে।’ ইসলামী শরীয়তের বিধান অনুসারে, কুরবানীর পশু হতে হবে যথেষ্ট হৃষ্টপুষ্ট। খোঁড়া, অন্ধ, দন্তহীন, লেজকাটা, পাগল ইত্যাদি জন্তু দ্বারা কুরবানী করা জায়েজ নয়।
ঈদুল আযহা এবার এমন এক সময়ে আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে, যখন এদেশের সাধারণ জনগণ চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। গত ক’ বছরে তাদের অনেকের ক্রয়ক্ষমতা আরো হ্রাস পেয়েছে। গত ক’ যাদের কুরবানী করার সামর্থ্য ছিল এবার তারা অনেকেই হয়তো কুরবানী করতে পারবেন না। এছাড়া দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও উত্তেজনা জনমনেও সঞ্চারিত হয়েছে। জনগণ উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে পালন করতে যাচ্ছেন এবার ঈদুল আযহা।
যা-ই হোক সকলেই চেষ্টা করছেন ঈদের আনন্দ উপভোগের। ঈদুল আযহা সমাজের বিত্তবান মানুষের মতো দরিদ্র ও অসহায় মানুষের জীবনেও নিয়ে নিয়ে আসুক নির্মল আনন্দ, পবিত্র ঈদুল আযহার ত্যাগ, ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা ও চেতনা সহায়ক হোক বিদ্যমান সংকট উত্তরণে-ঈদের প্রাক্কালে এটাই আন্তরিক কামনা।
পৌর ঈদগাহসহ সকল ঈদগাহ ইতোমধ্যে প্রস্তুত হয়ে গেছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে ঈদগাহে নামাজ হবে। আর আবহাওয়া যদি অনুকূলে না থাকে তাহলে ঈদগাহ সংলগ্ন মসজিদে ঈদের জামাত হবে। জেলা প্রশাসনের ঈদ প্রস্তুতি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এদিকে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা এ বিষয়ে সর্বদা টহল জোরদার রাখে। ঈদুল আযহা উপলক্ষে জেলা শহরের ছোট-বড় শপিং সেন্টার ও মার্কেটগুলোতে বেচাকেনা কিছুটা কম হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার বেচাকেনা খুব খারাপ হয়েছে। কিছুটা ভিড় লক্ষ্য করা গেছে কসমেটিকস্ ও প্রসাধনী দোকানগুলোতে। সব মিলিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এখন ঈদের শেষ প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে চাঁদপুরের প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও কোস্টগার্ড নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। বিভিন্ন ছোট-বড় মার্কেট, গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়, বাসস্ট্যান্ড ও লঞ্চ টার্মিনালসমূহে পুলিশের তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। লঞ্চঘাটসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি রোভার স্কাউট সদস্যদের যানজট নিয়ন্ত্রণে এবং শৃঙ্খলা রক্ষায় তৎপর থাকতে দেখা গেছে। তাদেরকে বয়োবৃদ্ধদের লঞ্চে উঠানামা করতে সহযোগিতা করতেও দেখা গেছে।