মসজিদে নামাজের বিধিনিষেধ যেসব শর্তে তুলে দেয়া হচ্ছে

বাংলাদেশে সব ধরণের নামাজের ওপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার শর্তসাপেক্ষে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) জোহরের নামাজ থেকে বাংলাদেশে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, জুম্মা এবং তারাবির নামাজ – সব ধরণের নামাজের জন্য মসজিদ উন্মুক্ত করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ১০৯২৯ মোট শনাক্ত ১৪০২ সুস্থ হয়েছেন ১৮৩ মৃত্যু

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশ সরকার ওয়াজ মাহফিল এবং তীর্থযাত্রা সহ সব ধরণের ধর্মীয়, রাজনৈথিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জমায়েত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল ১৯শে মার্চ।

তবে তখন মসজিদে নামাজ পড়া স্থগিত রাখার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।

ঐ ঘটনার সপ্তাহদুয়েক পর মসজিদে নামাজ পড়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার।

সেসময় মুসল্লিদের ঘরে নামাজ পড়ার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয় যে, দৈনিক জামাতে সর্বোচ্চ পাঁচ জন এবং জুম্মার নামাজে সর্বোচ্চ ১০ জন মুসল্লি অংশ নিতে পারবেন।

এর কিছুদিন পর রমজান মাস শুরু হওয়ার আগে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মসজিদে তারাবির নামাজ আদায় করার ওপরও বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়।

তারাবির নামাজে সর্বোচ্চ ১২ জন অংশ নিতে পারবেন বলে জারি করা হয় নির্দেশনা।

–সৌদি আরবে সামাজিক দূরত্ব মেনে মসজিদে নামাজ পড়ছেন মানুষ

মসজিদে নামাজ পড়তে যেসব শর্ত মানতে হবে:

  • মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে মসজিদ জীবাণূনাশক দিয়ে পরিস্কার করতে হবে।
  • মসজিদের গেটে হ্যান্ড স্যানিটাইজার/সাবান পানি/হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
  • প্রত্যেক মুসল্লিকে মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে।
  • মুসল্লিদের বাসা থেকে ওজু করে এবং সুন্নাত নামাজ পড়ে আসতে হবে।
  • কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে তিন ফুট পরপর দাঁড়াতে হবে এবং এক কাতার বাদ দিয়ে কাতার তৈরি করতে হবে।
  • অসুস্থ ব্যক্তিদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি জামায়াতে অংশ নিতে পারবে না।
  • মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না।
  • মসজিদে সেহরি ও ইফতারের আয়োজন করা যাবে না।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে মার্চ মাস থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়।

ঐ ধারাবাহিকতায় মক্কা ও মদিনার মসজিদ চত্বরে নামাজ নিষিদ্ধ করা হয় মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে।

এরপর মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া সহ বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশ নিষিদ্ধ করে জামায়াতে নামাজ পড়া।

কোনো কোনো দেশে মসজিদে গিয়ে সামাজ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তে মানুষের মধ্যে ক্ষোভও তৈরি হয়। যেমন পাকিস্তানের একটি প্রদেশে মসজিদে নামাজ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মানুষ বিক্ষোভ করার পর আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সাথে সংঘর্ষ হয়েছিল।

তবে রমজান মাসে অনেক দেশেই মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করার ব্যাপারে কড়াকড়ি শিথিল করা হয়েছে।

বাংলাদেশেও মসজিদে গিয়ে নামাজ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত দেয়ার পর বেশ ক্ষোভ তৈরি হয় মানুষের মধ্যে।

কওমী মাদ্রাসাগুলোর একটি বোর্ড এবং একটি সংগঠন হেফাজতে ইসলাম স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ ১৪টি শর্তে মসজিদে তারাবির নামাজ সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবি জানিয়েছিল এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে। সেসময় সরকার তাদের ঐ দাবি নাকচ করেছিল।

মসজিদ খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে গতকাল (৫ই মে) বাংলাদেশের আলেমদের অনেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছিল।