বাতাসেও করোনা ছড়ায়!

অনলাইন ডেস্ক: 

এখন পর্যন্ত এটাই সবাই জানতো যে, শুধুমাত্র মানুষের মাধ্যমে কিংবা আক্রান্তের স্পর্শ করা স্থান থেকেই করোনা ছড়াচ্ছে। কিন্তু নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে ছড়াতে সক্ষম, যার কারণে এটি অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম হয়েছে।সম্প্রতি ফিনল্যান্ডের বিজ্ঞানীর এক গবেষণায় সেটি প্রমাণ করেছেন। লাইভ সায়েন্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

এরআগে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজের (এনআইএআইডি) একদল চিকিৎসকও এ বিষয়ে গবেষণা করে একই দাবি করেছিলেন।

ফিনল্যান্ডের গবেষকরা তাদের গবেষণাটির জন্য আলটো ইউনিভার্সিটি, ফিনিশ মেটেরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউট, ভিটিটিস টেকনিক্যাল রিসার্চ সেন্টার ও হেলসিঙ্কি ইউনিভার্সিটির একটি যৌথ গবেষক দল কাজ করেছে। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে কীভাবে কোনো ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসের অঞ্চল ছেড়ে ছোট ছোট ভাইরাল কণা ছড়িয়ে পড়ে, এর মডেল তৈরিতে সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করেছে তারা। গবেষণাকাজে তারা এমন একটি কৃত্রিম দৃশ্য তৈরি করেছে, যেখানে দোকানের দুই তাকের মাঝে কোনো ব্যক্তি হাঁচি-কাশি দিলে সেখানকার বায়ু চলাচলের বিষয়টি হিসাবের মধ্যে আনা যায়।

ফ্লুইড ডায়নামিকস নিয়ে গবেষণাকারী আলটো ইউনিভার্সিটির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উইল ভুরিনেন এক বিবৃতিতে বলেন, করোনাভাইরাস ছড়ানোর মডেল নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে তাঁরা দেখেছেন কোনো ব্যক্তির কাশির সময় তার চারপাশে অ্যারোসল ‘মেঘ’ তৈরি হয়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে ও মিশে যায়। তবে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কয়েক মিনিট সময় লাগে। এই সময়ের মধ্যে ওই ঘনীভূত মেঘের মতো এলাকা দিয়ে কেউ হেঁটে গেলে তত্ত্ব অনুযায়ী এসব ভাইরাল কণা তাঁর শ্বাসের সঙ্গে ঢুকে পড়ে।

ভুরিনেন বলেন, করোনাভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত কেউ কাশি দিয়ে চলে যেতে পারে, তবে তবে তিনি করোনাভাইরাস বহনকারী অত্যন্ত ছোট অ্যারোসোল কণাকে পেছনে রেখে যান। এসব কণা আশপাশের অন্যদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ঢুকে যেতে পারে।

গবেষণার ভিত্তিতে ফিনল্যান্ডের গবেষকেরা এখন মানুষজনকে যেসব এলাকায় বেশি জনসমাগম হয় এবং অন্দরের যেসব জায়গায় বেশি লোকজন চলাচল করে, সেগুলো এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন।

গবেষকেরা ২০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট অ্যারোসোল কণার গতিবিধির মডেল তৈরি করেছেন, যাতে এত ক্ষুদ্র কণাও আছে, যা বাতাসে ভেসে থাকতে পারে এবং কোনো পৃষ্ঠে পড়ার চেয়ে বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে চলাচল করে।

গবেষকেরা বলছেন, তাঁদের তৈরি মডেলটি আরও উন্নত করতে কাজ করবেন এবং বায়ুতে চলাচলকারী কণার চলাচল আরও ভালোভাবে বুঝতে ভিজুয়ালাইজেশন প্রক্রিয়াও উন্নত করবেন।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা বলছেন, প্লাস্টিক কিংবা স্টেইনলেস স্টিলের গায়ে কয়েকদিন পর্যন্ত টিকে থেকে সংক্রমণ ঘটাতে পারে ওই ভাইরাস।

গবেষণায় তারা ১১ করোনা আক্রান্তের কক্ষ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তাদেরকে অন্য রোগিদের থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু দেখা গেল তাদের কক্ষের প্রায় সব স্থানেই এই ভাইরাসের উপস্থিতি।

গবেষকরা যখন কক্ষের বাতাসের নমুনা নিলেন, সেখানেও করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছেন তারা। তাদের গবেষণাপত্রে আরো উঠে এসেছে যে, চিকিৎসকরা যেই হলরুম দিয়ে চলাচল করে থাকেন তার বাতাসেও করোনা ভাইরাস ছিল। তবে এই ভাইরাস বাতাসে কতদূর উড়ে যেতে পারে সেটি এখনো জানা যায়নি। এ নিয়ে আরো বিস্তর গবেষণা শুরু করেছে দলটি।

ডিএস/এএইচ