দেশের ১৪ ভাগ মানুষের ঘরে খাবার নেই

অনলাইন ডেস্ক:

করোনা মহামারীর করাল গ্রাসে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ।সংক্রমণ রুখতে লকডাউন চলছে। আর এই অভূতপূর্ব প্রতিকূল পরিস্থিতি দেশের গরিব মানুষদের আয় ও খাদ্য নিরাপত্তায় চরম আঘাত হেনেছে। যার জেরে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গিয়েছেন ৮৯ শতাংশ মানুষ। এখানেই শেষ নয়। ১৪ ভাগ মানুষের ঘরে কোনও খাবারই নেই।আর ২৯ শতাংশের ঘরে আছে ১ থেকে ৩ দিনের খাবার।স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ব্র্যাকের চালানো এক সমীক্ষায় এমনই সব উদ্বেগজনক তথ্য সামনে এসেছে।

দেশের ৬৪ জেলায় ২ হাজার ৬৭৫ জন নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে বলে শুক্রবার (১০ এপ্রিল) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

গত ৩১ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিলের মধ্যে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় ২,৬৭৫ জন নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে এই সমীক্ষা চালিয়েছে ব্র্যাক। তারা জানিয়েছে, এই সমীক্ষার নেপথ্যে দু’টি উদ্দেশ্য ছিল। প্রথমত: উদ্ভূত সংকটের জেরে নিম্ন আয়ের মানুষদের কী ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা। দ্বিতীয়ত: করোনাভাইরাসের স্বাস্থ্যগত দিকগুলো সম্পর্কে সমাজের প্রান্তিক মানুষজন কী ভাবছে, সে সম্পর্কে ধারনা পাওয়া। শুক্রবার ঢাকায় সেই সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।

জরিপে উঠে এসেছে, কোভিড-১৯ প্রতিরোধের পদক্ষেপের মারাত্মক প্রভাব পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষ জীবিকায়। করোনাভাইরাসের আগে আয়ের ভিত্তিতে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২৪ শতাংশ ছিলেন দারিদ্র্যরেখার নিম্নসীমার নিচে এবং ৩৫ শতাংশ ছিলেন দারিদ্র্যরেখার ঊর্ধ্বসীমার নিচে। কিন্তু এখন জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮৯ শতাংশ দারিদ্র্যরেখার নিম্নসীমার নিচে নেমে গেছেন। অর্থাৎ বর্তমান পরিস্থিতে চরম দারিদ্র্য আগের তুলনায় ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

কোভিড-১৯ মহামারির আগে জরিপে অংশ নেয়া ২ হাজার ৬৭৫ জনের গড় আয় ছিল ১৪ হাজার ৫৯৯ টাকা। যাদের মধ্যে ৯৩ শতাংশ জানায়ছ এই কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের পর তাদের আয় কমেছে। মার্চ ২০২০ এ এসে তাদের গড় আয় দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭৪২ টাকায়। অর্থাৎ তাদের পারিবারিক আয় ৭৫ শতাংশের মতো কমে এসেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম (৮৪ শতাংশ), রংপুর (৮১ শতাংশ) এবং সিলেট বিভাগের (৮০ শতাংশ) মানুষের আয় কমেছে সবচেয়ে বেশি।

ব্র্যাক এর জরিপে উঠে এসেছে, সরকারি ছুটি বা সামাজিক দূরত্বের কারণে ৭২ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছেন বা তাদের কাজ কমে গেছে। ৮ শতাংশ মানুষের কাজ থাকলেও এখনও তারা বেতন পাননি।

কৃষিকাজে সম্পৃক্তদের (৬৫ শতাংশ) তুলনায় অ-কৃষিখাতের দিনমজুররা বেশি (৭৭ শতাংশ) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৫১ শতাংশ রিকশাচালক, ৫৮ শতাংশ কারখানা শ্রমিক, ৬২ শতাংশ দিনমজুর, ৬৬ শতাংশ হোটেল/রেস্তোরাঁকর্মী জানান- চলতি মাসে তাদের আয় নেমে এসেছে শূন্যের কোঠায়। ১৪ ভাগ মানুষের ঘরে কোনও খাবারই নেই। ২৯ শতাংশের ঘরে আছে ১ থেকে ৩ দিনের খাবার।

জরিপে দেখা গেছে, কোভিড-১৯ সম্পর্কে শতকরা ৯৯ দশমিক ৬ ভাগ মানুষ শুনেছেন। যার মধ্যে ৬৬ ভাগ মানুষ প্রথম বিষয়টি জেনেছেন টেলিভিশন থেকে। মাত্র ৪০ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশন কোভিড-১৯ থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাব্য উপায়। আক্রান্ত হলে কোথায় যোগাযোগ করতে হবে এ বিষয়ে নারীদের (৩৮ শতাংশ) চেয়ে পুরুষদের (৬০ শতাংশ) ধারণা বেশি। ৪৮ শতাংশ মানুষ মনে করে সরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯-এর রোগীর চিকিৎসা হয় না। ৯ শতাংশ মানুষ জানেনই না এই অবস্থায় কী করা উচিত।

কোভিড-১৯ প্রতিরোধে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয় সে বিষয়েও ৩৬ শতাংশ উত্তরদাতার স্পষ্ট ধারণা নেই। এ ছাড়া করোনা সংক্রমণের লক্ষণ (জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট) দেখা দিলে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সরাসরি চলে না আসার যে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে সে বিষয়েও ধারণা নেই অধিকাংশের। শতকরা ৫৩ জন উত্তরদাতা বলেছেন প্রতিবেশীর এসব লক্ষণ দেখা দিলে তাকে শহরের হাসপাতাল বা সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেবেন। মাত্র ২৯ শতাংশ হেল্প লাইনে ফোন করার কথা বলেছেন।

জরিপে দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকারের ভূমিকা যথেষ্ট বলে মনে করেন ৬৪ শতাংশ মানুষ। বাকিদের মধ্যে ৩১ শতাংশ গ্রামের মানুষ এবং ৪০ ভাগ শহরের মানুষ এই ধারণাকে সমর্থন করেননি। মাত্র ৪ শতাংশ মানুষ (যাদের বেশির ভাগের বাস শহরে) জরুরি ত্রাণ পেয়েছেন বলে জানান (৫ এপ্রিল পর্যন্ত)। এ পরিস্থিতিতে সরকারের খাদ্য সহায়তা জরুরি বলে মনে করেন ৪৭ শতাংশ মানুষ। যেখানে শতকরা ২০ ভাগ চান নগদ অর্থ সহায়তা। শহরের মানুষের (৪৪ শতাংশ) চেয়ে গ্রামের মানুষরাই (৫০ শতাংশ) খাদ্য সহায়তার পক্ষে বেশি মত দেন।

ডিএস/এএইচ