চাঁদপুরে চাল তেল মুরগিতে বাড়তি দাম, দিশেহারা ভোক্তারা

চাঁদপুর দিগন্ত রিপোর্ট

অব্যাহতভাবে গত দুই সপ্তাহ ধরে বেড়েই চলেছে চালের দাম। একই ভাবে কয়েকসপ্তাহ ধরে টানা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দামও। আর নতুন করে বেড়েছে পেঁয়াজ, আলু ও ভোজ্যতেলের দাম। নিয়ন্ত্রণ নেই সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা প্রশাসনের। এমন পরিস্থিতিতে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে বেশকিছু দিন ধরেই অস্বস্তিতে ভুগছেন ভোক্তারা।

চাঁদপুর শহরের পুরানবাজর, পালের বাজার ও বিপনীবাগসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং ভোক্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ২-৩ টাকা করে বেড়েছে। প্রতি কেজি নাজিরশাইল চাল এখন ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে এই চালের দাম ছিল ৬৬ টাকা কেজি। একইভাবে মিনিকেট চালও বিক্রি হচ্ছে ৬৮ টাকা কেজি। এছাড়া জিরা নাজির ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাটারিভোগ ৯০ টাকা, চিনিগুড়া পোলাও চাল ৯৫ টাকা, পাইজাম ৫৫ টাকা। আর গরীবের মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে।

সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি বলছে, গত এক সপ্তাহে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৪ শতাংশ। মাঝারি চালের দাম বেড়েছে ২ শতাংশ। চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে কথা হয় চাঁদপুর শহরের পাল বাজার এলাকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরিজীবী কামরুল আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সীমিত আয়ের মানুষদের পক্ষে ৭০ টাকা কেজি চাল খাওয়া অসম্ভব। কিন্তু বাধ্য হয়ে অনেকেই ৬৮ থেকে ৭০ টাকা কেজি চাল খাচ্ছেন।’

চালের দাম কেজিতে অন্তত ২০ টাকা কম হওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি। তবে নগরীর বড় বাজারের চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে বাজারে নতুন চাল না আসা পর্যন্ত চালের বাজার এখন যেমন আছে, তেমনই থাকবে। আমদানি করা চালের দাম বেশি হওয়ার কারণে দাম কমছে না বলেও জানান তারা।

এদিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। পাকিস্তানি কক মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত। শহরের ওয়ারলেছ, বিপনীবাগ বাজারসহ বিভিন্ন বাজারের তথ্য বলছে, খুচরা পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫০ টাকা। আর দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকার মধ্যে। যদিও দুই মাস আগে এই মুরগির দাম ছিল ১২০ টাকা কেজি।

নিয়ন্ত্রণ নেই সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা প্রশাসনের।

গত সপ্তাহে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া সোনালী মুরগির দাম বেড়ে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে এই মুরগির দাম ছিল ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সোনালী মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ৭০ টাকা এবং দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ১২০ টাকা। বিপনীবাগ

বাজারের মুরগি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘পাইকারি বাজারে এখন মুরগি কম আসছে। এছাড়া এখন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এর চাহিদাও বাড়তি। এ কারণে বাড়তি দামে মুরগি কিনতে হচ্ছে, ফলে বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।’ বাজারে দেশি মসুর ডাল ১০০ টাকা ও ক্যাঙ্গারু মসুর ডাল ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২২ টাকা, পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, তেলের দাম কার্টনপ্রতি ৭০-৮০ টাকা বেড়েছে। প্রতি লিটার রূপচাঁদা তেল ১৩৫-১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া তীর মার্কা তেল ১৩২ টাকা, বসুন্ধরা ১৩০-১৩৫ টাকা, চাঁন তেল ১৩০ টাকা ও পুষ্টি তেল ১৩৫-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারের তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকার বেশি। টিসিবি বলছে, এক সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩৬ শতাংশ। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৮ শতাংশ। এছাড়া রসুন ১১০ টাকা ও আদা ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে অধিকাংশ সবজি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকার কাছাকাছি। প্রতি পিস পাতাকপি ও ফুল কপি ২০ টাকা, আকারভেদে লাউ প্রতি পিস ২০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ও ধনিয়া ২০-৫০ টাকা, টমেটো ৪০ টাকা, শিম ৩০ টাকা ও বেগুন ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরিষা শাক ১০ টাকা, পালং শাক ৮-১০ টাকা, ডাটা হালি প্রতি ১৫ টাকা, লাল শাক ১০ টাকা, পুঁই শাক ২০ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।