আগামী ৩০ জানুয়ারী হাজীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে ২০টি ভোট কেন্দ্রে, ৪৫ হাজার ৩শ ৪৮জন ভোটারের চুড়ান্ত রায়

খালেকুজ্জামান শামীম

আর মাত্র ২ দিন পরে হাজীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন। মেয়র পদে দুই প্রার্থীর ভোটের লড়াই। ভোটাররা তাদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত রায় ৩০ জানুয়ারি ভোটের মাধ্যমে দিতে প্রস্তুত। এই পৌরসভায় মোট ভোটার ৪৫ হাজার ৩৪৮ জন। পুরুষ ভোটার ২২ হাজার ৯৫৫ জন, নারী ভোটার ২২ হাজার ৩শ ৯৩ জন। এখানে ১২ টি ওয়ার্ডে ২০টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া মেয়র পদে দুইজন, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী ১৫ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ১২ ওয়ার্ডে ৫২ জন প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন।

দুই প্রার্থীর হলফনামায় দেখা গেছে, মাত্র দেড় লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন, অন্যদিকে প্রায় আট কোটি টাকার ব্যাংক ঋণে জর্জরিত বিএনপির মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল মান্নান খান।

সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, হাজীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে ১২টি ওয়ার্ডে মোট ভোট কেন্দ্র ২০টি। ভোট কক্ষ ১২৮টি এবং অস্থায়ী ভোট কক্ষ ১৯টি।

নির্বাচনী মাঠে প্রার্থীর প্রচারণা থাকলেও নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ কম চোখে পড়ছে। এদিকে কয়েকটি ওয়ার্ডে দলীয় সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে জটিলতা রয়েছে। মহামারী করোনার কথা ভুলে গিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন পৌর নির্বাচন। ব্যালট পেপারে এর মাধ্যমে ভোট প্রয়োগ হবে। প্রার্থীদের গণসংযোগ আর মাইকিংসহ প্রচার-প্রচারণায় জমজমাট হয়ে উঠছে এ নির্বাচন।

হাজীগঞ্জ শহরের সর্বত্র প্রার্থীদের ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টারে ছেয়ে গেছে। অলি গলিতে চলছে প্রার্থীদের পক্ষে ব্যাপক মাইকিং প্রচারণা। প্রার্থীরা লিফলেট বিতরণ করে ভোট চেয়ে চষে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন এলাকা। আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থীর সমর্থনে নির্বাচনী অফিসগুলো সবচে’ বেশি জমজমাট। সেখানে নৌকার নির্বাচনী জনপ্রিয় গান বাজনো হচ্ছে। ভোটারদের মন জয় করতে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে মেয়র প্রার্থীরা দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রæতি।

নৌকা প্রার্থীর কর্মীরা বিভিন্নভাবে মহড়া দিয়ে ভোটারদের মাঝে আর্তংক ছড়াচ্ছে।

পুরো নির্বাচনটি এখন পযর্ন্ত ঝুকিপূর্ন বিরাজমান। ভোট উৎসবের সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন করার দাবি। ভোটারদের কেন্দ্রে যাবার আহ্বান জানান বিএনপি প্রার্থী।

আ.স.ম মাহবুবুল আলম লিপন তার স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা দেখিয়েছেন মকিমাবাদ মিয়া বাড়ি। পিতা মৃত রফিক উদ্দিন আহম্মদ, মৃত মা জাহানারা বেগম। তার নামে কোন মামলা নেই। নির্ভরশীল বাৎসরিক আয়ের উৎস মেয়র হিসেবে সম্মানী ভাতা ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তবে পেশা দেখিয়েছেন সমাজসেবা।

অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নগদ নিজের নামে ১লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৫০ হাজার টাকা। স্বামী-স্ত্রীর নামে বিশ ভরি স্বর্ণ। ইলেকট্রিক সামগ্রীর মধ্যে চারটি ফ্যান, টিভি, ফ্রিজ, খাট, সোফা, চেয়ার, টেবিল, স্টিল আলমারি, সুকেজ, ডাইনিং টেবিল ইত্যাদি এবং স্ত্রীর নামে একটি ল্যাপটপ, তিনপাট কাঠের আলমারি রয়েছে।
স্থাবর সম্পদ হিসেবে তিনি দেখিয়েছেন, কৃষি জমি ৩৫ শতক, অকৃষি জমি দুই শতক, বাড়িতে একটি চৌচালা টিনের ঘর রয়েছে। দায়-দেনা নেই।

নির্বাচনী খরচের মধ্যে তিনি দেখিয়েছেন, তার সম্ভাব্য অর্থের পরিমাণ ২৫ হাজার টাকা, তার বড় ভাই আমেরিকা প্রবাসী এ এফএম বদরুল আলম থেকে স্বেচ্ছায় দুই লাখ ৭৫ হাজার টাকা গ্রহন করবেন। নির্বাচনী অফিস খরচ ১৫ হাজার টাকা, পোস্টার খরচ ১৫ হাজার, প্রার্থীর কেন্দ্রীয় অফিস খরচ ১০ হাজার, যাতায়াত খরচ নির্বাচনী এজেন্ট ও কর্মী বাবদ ৪৫ হাজার, নির্বাচনে ঘরোয়া বৈঠক ও সভা বাবাদ ১০ হাজার টাকা, লিফলেট খরচ দেখাননি, হ্যন্ডবিল খরচ ১৫ হাজার, ডিজিটাল ব্যানার ১২ হাজার, ৩০টি পথসভার ১০ হাজার, মাইকিং খরচ ৩৩ হাজার, অফিস আপ্যায়ন খরচ ৩০ হাজার, কর্মী খরচ ৫০ জনের এক লাখ টাকা, বাঁশের লাঠি, সুতা, আইকা, পলিথিন বাবদ ৫ হাজার টাকা। তবে দুর্ভাগ্যজনক সত্যি হলেও টেলিভিশন বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক মিডিয়া খরচ বাবদ তিনি কোনো অর্থই বরাদ্দ রাখেননি।

বিএনপি’র প্রার্থী আবদুল মান্নান খান বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা দেখিয়েছেন হাজীগঞ্জ পৌরসভার মকিমাবাদ ৬নং ওয়ার্ড কাপড়িয়া পট্টি। তার মা মৃত আমেনা বেগম, বাবা মৃত আব্দুল জব্বার খান। তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা থাকলেও চার্জশীট থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে।

হাজীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে ব্যানারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে জনপদ

তিনি পেশার বিবরণীতে তিনি দেখিয়েছেন ব্যবসা, বাড়ীঘর, কৃষি ও ব্যাংক সুদ খাতের আয়। আয়ের উৎস দেখেছেন, কৃষিখাতে ২১ হাজার ৫০০ টাকা, বাড়িভাড়া ও বিভিন্ন দোকান ভাড়া দুই লাখ ১৭ হাজার ২০০ টাকা, ব্যবসা পেশাগত আয় ১৫ লাখ ৬০ হাজার ৯২৫ টাকা, অন্যান্য আয় ও ব্যাংক সুদ দুই লাখ ২৯ হাজার ৬’শ ১৪ টাকা।

অস্থাবর সম্পদ নগদ ৩ লাখ ৫০ হাজার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ২৬ লাখ ২২ হাজার ৬০০ টাকা, বাস, ট্রাক ও মাইক্রোবাস যানবাহন ৪৪ লাখ টাকা, নিজের নামে ৫ তোলা স্বর্ণ আর স্ত্রীর নামে ১৫ তোলা- তাও বিয়ের অনুষ্ঠানে পাওয়া। ইলেকট্রিক ও বিভিন্ন আসবাবপত্র স্ত্রীর নামে দেখিয়েছেন টিভি ফ্রিজ এবং খাট আলমারি। অন্যান্য ক্ষেত্রে অস্থাবর চার কোটি ৮১ লাখ ৭ হাজার ৮৭৬ টাকা।

স্থাবর সম্পদ বিবরণীতে দেখিয়েছেন, কৃষি জমির পরিমাণ ১৫০ শতাংশ, জমি ও দালান ১০৩ শতাংশ, একটি ফ্ল্যাট বাড়ী যার মূল্য ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, স্ত্রীর নামে আট শতাংশ এবং ফ্ল্যাট বাড়ীর প্রতি তলায় ২৮০০ বর্গফুট।

তিনি ব্যাংক ঋণে জর্জরিত। দায়-দেনা সমূহের ঘরে তিনি দেখেছেন ইসলামী ব্যাংক থেকে সিসি লোন রয়েছে ৬ কোটি ৯৬ লাখ ৪১ হাজার ৩৭২ টাকা, ব্যবসার পাওনাদার ৯৯ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা, স্ত্রীর নামে ইসলামী ব্যাংকে সিসি লোন ১ কোটি ৭ লাখ ৪৪ হাজার ৯৪০ টাকা, গৃহনির্মাণ লোন রয়েছে ৩১ লাখ ১৯ হাজার ৩৪৪ টাকা।
বিএনপির প্রার্থী আব্দুল মান্নান খান তিনি তাঁর নির্বাচনী খরচের মধ্যে দেখিয়েছেন সম্ভাব্য অর্থের পরিমাণ তিন লাখ টাকা। পোস্টার খরচ ২০ হাজার, নির্বাচনী অফিস খরচ ১৮ হাজার, প্রার্থীর কেন্দ্রীয় খরচ ৩০ হাজার, যাতায়াত খরচ ৪০ হাজার,

হ্যান্ডবিল খরচ ১৫ হাজার টাকা, ডিজিটাল ব্যানার ৩০টি ২১ হাজার, পথসভার খরচ ১৮ হাজার টাকা, মাইকিং খরচ ৪২ হাজার টাকা, আপ্যায়ন খরচ ১৮ হাজার, কর্মী খরচ ৩৫ জনের ৭০ হাজার, ফটোকপি, তার, কাঠি, রশি, আইকা বাবদ ৮ হাজার টাকা। তিনিও টেলিভিশন বা অন্য ইলেকট্রনিক সামগ্রী বাবদ কোন খরচ রাখেননি।